শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ভারত সরকার এক মাসের জন্য প্রায় সব ভিসা স্থগিত করায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন চিকিৎসার জন্য প্রতিবেশী এই দেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া বাংলাদেশিরা।
‘অত্যাবশ্যকীয় কারণে’ ভারত যেতে হলে হাই কমিশনে যোগাযোগের কথা সেদেশের সরকার বললেও ঢাকায় দেশটির হাই কমিশনের কর্মকর্তারা এখনই আশা দিতে পারছেন না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করার পর কয়েকটি ক্যাটাগরি বাদে অন্য সবার ভিসা স্থগিত এবং নতুন ভিসা দেওয়া বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় ভারত সরকার।
এই নিষেধাজ্ঞা শুক্রবার রাত ১২টা থেকে কার্যকর হবে, চলবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। কেবল কূটনৈতিক, অফিসিয়াল, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, চাকরি এবং প্রকল্প ভিসা স্থগিতাদেশের বাইরে রেখেছে তারা।
এমন স্থগিতাদেশের কারণে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন অনেক বাংলাদেশি, ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে এই সময়ে তাদের চিকিৎসা নিতে যাওয়ার কথা।
ঢাকার শাঁখারীবাজারের বাসিন্দা অভিজিৎ কুমার দে জানান, তার মা সীমা দে ‘পেরিফেরাল ভাসকুলার’ রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে এর চিকিৎসা না থাকায় তারা ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
সে অনুযায়ী ২৪ মার্চ চেন্নাইয়ের ভেলোর সিএমসি হাসপাতালের অ্যাপয়েন্টমেন্টও তারা নিয়েছেন। ১৬ মার্চ ভিসা হাতে পেলে পরদিন রওনা হওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
”এখন ওরা বলছে, ভিসা দেবে না। পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে থামে আমরাতো এখনও জানি না,” বলে অভিজিৎ।
তিনি জানান, ভিসার সন্ধান নিতে বৃহস্পতিবার যোগাযোগ করলে হাই কমিশনের ভিসা হেল্পে ই-মেইল করতে বলা হয়। এরপর সেখানে ই-মেইল করলে তাদের বলা হয় রোগীকে নিয়ে সরাসরি হাই কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে।
সে অনুযায়ী রোববার হাই কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন জানান অভিজিৎ। কিন্তু সেখানে গিয়ে কী হবে, এখনও তার জানা নেই।
৩৯ বছর বয়সী মায়ের শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে তরুণ অভিজিৎ বলেন, “আমার মায়ের হাত-পা সব শুকাইয়া যাইতেছে। তার অলরেডি দুই পায়ের পাতা গোড়ালি পর্যন্ত শুকাইয়া কাঠের মত শক্ত হয়ে গেছে।”
ফরিদপুরের সরকারি আইনুদ্দিন কলেজের শিক্ষক জহুরুল ইসলামও তার মাকে নিয়ে প্রায় একই রকম জটিলতায় আছেন।
মেরুদণ্ডের জটিলতা নিয়ে গত নভেম্বরে তিনি চিকিৎসা নিয়েছিলেন ভেলোরের সিএমসি হাসপাতালে। সে সময় অস্ত্রোপচার করার পরামর্শ পেয়ে টাকা জোগাড় ও অন্যান্য প্রস্তুতির জন্য দেশে ফিরে আসেন আইনুদ্দিন।
অস্ত্রোপচারের জন্য ইতোমধ্যে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া গেলেও ভিসা বন্ধ হওয়ায় এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন বলে জানান জহুরুল।
তিনি বলেন, “সব কিছু ঠিকঠাক করে যখন ভিসার আবেদন করতে যাব, তখনই এই ঝামেলা লাগল। এখনতো জানিও না, কবে এই সমস্যার সমাধান হবে।”
পুরান ঢাকার বাসিন্দা রায়হান আহমেদ বলেন, তার বাবা এর আগে ভেলোরে হৃদরোগের চিকিৎসার নিয়েছেন কয়েকবার। এ মাসে আবার তার সেখানে যাওয়ার কথা ছিল।
”গত ফেব্রুয়ারিতে উনাকে কয়েকদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখতে হয়েছিল। ঠিক করেছিলাম কিছুটা সুস্থ হলে ভারতে নেব। এখনতো আর সম্ভব না।”
ভারত ভিসা ব্যবস্থা সহজ করার পর গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশিদের সফরের প্রবণতা বাড়ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে এবার তাতে বড় ছেদ পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্যাসিফিক এশিয়া ট্র্যাভেল অ্যাসোসিয়েশনের (পাটা) বাংলাদেশ কেন্দ্রের মহাসচিব তৌফিক রহমান বলেন, “২০১৬ সালে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর যাতায়াত কমে গিয়েছিল, আমরা ক্ষতির মুখে পড়েছিলাম। এবার করোনাভাইরাস তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ক্ষতি করবে আমাদের ব্যবসার।”
তিনি বলেন, ”ভারতের যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশিরা সবার শীর্ষে, তার মধ্যে একটা বড় অংশ মেডিকেল পারপাসে যান। তাদের জন্যও এটা একটা বড় ধাক্কা।”
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসা, ব্যবসা, বেড়ানোসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজারের বেশি বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে প্রবেশ করেন, যাদের ১০ শতাংশের বেশি যান চিকিৎসা নিতে।
ইন্ডিয়ান চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়া বিদেশিদের ৪৫ শতাংশই যান বাংলাদেশ থেকে।
গত বুধবার ভিসা স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে ভারত সরকার বলেছিল, এই সময়ে যদি কোনো বিদেশি নাগরিককে ’অত্যাবশ্যকীয় কারণে’ভারতে যেতে হয়, তাহলে তিনি যেন নিকটস্থ ভারতীয় মিশনে যোগাযোগ করেন।
তবে চিকিৎসার মত জরুরি ক্ষেত্রেও আপাতত কিছু করার নেই বলেন জানিয়েছেন ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের এক কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ থেকে বেশিরভাগই যান মেডিকেল ভিসায়। এখন আমরা কাউকে ছাড়ছি না, পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হলে তখন দেখা যাবে।”